সারাদেশে চলমান ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ তম আবর্তনের (১ম বর্ষ) শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ মিছিল পালন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) তারিখে রাত ১০টায় শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়। সেখান থেকে একটি মশাল মিছিল শুরু করেন তারা। মিছিলটি মেয়েদের বিভিন্ন আবাসিক হল প্রদক্ষিণ করে বটতলায় এসে শেষ হয়। তারপর একটি সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ৫৩ তম আবর্তনের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা।
এসময় জার্নালিজম ৫৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ইফফাত রাইসা নূহা বলেন, বিগত ১৬ বছর আমরা যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছি ২৪ এর স্বাধীনতার পর সেটি কখনো কাম্য নয়।আমরা জানি গত কয়েকদিন আগে আমাদের বোন,৮ বছরের শিশু আছিয়া তার নিজ বোনের শশুড়ের দ্বারা ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে।সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে যাচ্ছে।এইরকম ঘটনা আমরা অহরহ দেখতে পাই।আমরা বিগত সময় দেখতে পেতাম এই নিপীড়ক ধর্ষকদের কোনো বিচার হতো না।আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে তারা সাজা থেকে বেঁচে যেতো।২৪ এর বাংলাদেশে কোনো ধর্ষকের একদিনের জন্য সাজামুক্ত থাকার সুযোগ থাকার কথা নয় বলে আমি মনে করি।অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা আমাদের নিরাপত্তা দান করুন।নিরাপদভাবে আমাদের বাঁচার সুযোগ দিন।নাহয় এই রাজপথই হবে আমাদের ঠিকানা।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৫৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী দুর্বার আদি বলেন, আমরা যারা জুলাই অভূত্থানের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে এগিয়ে গিয়েছিলাম মাতৃভূমির ডাকে, আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ যেখানে সকল মানুষ নিরাপদে বাস করবে। কিন্তু আমরা বিগত দিনগুলোকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে ভয়াবহ অবনতি দেখেছি এবং সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের যে ভয়াবহতা আমরা দেখেছি সেটা আমাদের কখনোই কাম্য ছিলোনা। আমরা সরকারের কাছে বারবার দাবি তুলেছি নিরাপত্তার। কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আমাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, আমাদের বোনদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু আজকে ঠিকই ঢাকায় ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে আমাদের বোনদের উপর পুলিশি হামলা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। ঘৃণা জানাই সেই পুলিশকে যারা জননিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয় কিন্তু অধিকারের মিছিলে হামলা করে।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এবনাত সামিহা বলেন, আজকে আমার যে বোন ধর্ষিত হয়ে হাসপাতালের বেডে কাঁতরাচ্ছে সে আসলে আমি।আজ যে বোন ধর্ষণের স্বীকার হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে সে আমিই।আমি শুধু বলতে চাই,আমাকে একজন নারী হিসেবে নয়,মানুষ হিসেবে বাঁচতে দিন।
শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নারীর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবি তুলে ধরা হয়। তারা বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।