ঢাকা ০৬:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
দুর্নীতি, ক্ষমতা ও লোভ যাকে কখনই স্পর্শ করেনি

বীর বিক্রম ড. কর্নেল অলি আহমদ: এক অবিস্মরণীয় দেশপ্রেমিক

হাজী কামাল প্রধান
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
  • / 60

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহী

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অমর ইতিহাস, যাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার গল্প অসম্পূর্ণ। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সাহসী তরুণ অফিসার হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং রেজিমেন্টকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন কর্নেল অলি আহমদ সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। এমনকি প্রস্তাব পাওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজে ঘোষণা না দিয়ে মেজর জিয়াকে তা করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান

পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম সাব-সেক্টর কমান্ডার এবং যুদ্ধকালীন প্রথম খেতাবধারী অফিসার হিসেবে “বীর বিক্রম” উপাধিতে ভূষিত হন।

রাজনীতি ও দেশগঠনে ভূমিকা

স্বাধীনতার পর কর্নেল অলি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮০ সালে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি দলটির নামকরণ, প্রথম কমিটি গঠন এবং রূপরেখা নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং দেশের আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা গঠনের রূপকার হিসেবে পরিচিত হন। তার নেতৃত্বে যমুনা সেতু, দাউদকান্দি সেতু, রূপসা সেতু ও ভৈরব সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।

সততার প্রতীক

অলি আহমদ এমন একজন নেতা, যিনি কখনো দুর্নীতি, লোভ বা ক্ষমতার মোহে পড়েননি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিএনপির প্রতি নিজের আনুগত্য বজায় রাখেন। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিত্ব ও কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েও কিনতে ব্যর্থ হন।

কর্নেল অলি আহমদ—একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন সাহসী যোদ্ধা, একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান, দেশের উন্নয়নে তার ভূমিকা, তার সততা ও নীতিবোধ তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, জাতি এখনো তাকে প্রাপ্য মর্যাদা দেয়নি।

এখন সময় এসেছে, ইতিহাসের সত্যকে যথাযথভাবে তুলে ধরা এবং কর্নেল অলি আহমদের মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের যথাযথ সম্মান দেওয়ার।

লেখক: হাজী কামাল প্রধান  ( গণমাধ্যমব্যাক্তিত্ব ও আহ্বায়ক,নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলডিপি)

 

নিউজটি শেয়ার করুন

দুর্নীতি, ক্ষমতা ও লোভ যাকে কখনই স্পর্শ করেনি

বীর বিক্রম ড. কর্নেল অলি আহমদ: এক অবিস্মরণীয় দেশপ্রেমিক

আপডেট সময় : ০৭:৩৪:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধে প্রথম বিদ্রোহী

ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম—বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক অমর ইতিহাস, যাকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার গল্প অসম্পূর্ণ। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক সাহসী তরুণ অফিসার হিসেবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং রেজিমেন্টকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন।

চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান যখন স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তখন কর্নেল অলি আহমদ সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। এমনকি প্রস্তাব পাওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজে ঘোষণা না দিয়ে মেজর জিয়াকে তা করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান

পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম সাব-সেক্টর কমান্ডার এবং যুদ্ধকালীন প্রথম খেতাবধারী অফিসার হিসেবে “বীর বিক্রম” উপাধিতে ভূষিত হন।

রাজনীতি ও দেশগঠনে ভূমিকা

স্বাধীনতার পর কর্নেল অলি সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৮০ সালে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি দলটির নামকরণ, প্রথম কমিটি গঠন এবং রূপরেখা নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯১ সালে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং দেশের আধুনিক সড়ক ব্যবস্থা গঠনের রূপকার হিসেবে পরিচিত হন। তার নেতৃত্বে যমুনা সেতু, দাউদকান্দি সেতু, রূপসা সেতু ও ভৈরব সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।

সততার প্রতীক

অলি আহমদ এমন একজন নেতা, যিনি কখনো দুর্নীতি, লোভ বা ক্ষমতার মোহে পড়েননি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিএনপির প্রতি নিজের আনুগত্য বজায় রাখেন। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা তাকে মন্ত্রিত্ব ও কোটি কোটি টাকার প্রস্তাব দিয়েও কিনতে ব্যর্থ হন।

কর্নেল অলি আহমদ—একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন সাহসী যোদ্ধা, একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক নেতা। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদান, দেশের উন্নয়নে তার ভূমিকা, তার সততা ও নীতিবোধ তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, জাতি এখনো তাকে প্রাপ্য মর্যাদা দেয়নি।

এখন সময় এসেছে, ইতিহাসের সত্যকে যথাযথভাবে তুলে ধরা এবং কর্নেল অলি আহমদের মতো প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের যথাযথ সম্মান দেওয়ার।

লেখক: হাজী কামাল প্রধান  ( গণমাধ্যমব্যাক্তিত্ব ও আহ্বায়ক,নারায়ণগঞ্জ মহানগর এলডিপি)