শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ ৮ জন অগ্নিদগ্ধ

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :

নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর ৮ নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের শান্তিবাগ এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে গ্যাসের লাইন লিকেজ হয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছ।

গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ বিস্ফোরণে পাশা পাশি দুটি কক্ষের দুটি পরিবারের নারী ও শিশুসহ ৮ জন দগ্ধ হয়েছেন । বিস্ফোরণ গুরুতর দগ্ধরা হলেন- রিকশাচালক মো. হান্নান (৫৫), ও তার পোশাককর্মী স্ত্রী নুরজাহান আক্তার লাকী (৩২), তাদের ছেলে সাব্বির (১২), মেয়ে সামিয়া (১০) ও জান্নাত (৩)। অপর পরিবারের সদস্য মোঃ সোহাগ (২৫) তার স্ত্রী রুপালি বেগম (২২) ও তাদের একমাত্র মেয়ে সুমাইয়া (১৬ মাস) ৷ ঘটনার পরপরই বাড়ির লোকজন ও এলাকাবাসী ছুটে এসে দগ্ধদের উদ্ধার করে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে পাঠিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, দগ্ধ নারী-শিশুসহ ৮ জনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক জানিয়ে তিনি আরও বলেন জরুরি বিভাগে তাদের চিকিৎসা চলছে। কার শরীরের কত শতাংশ দগ্ধ হয়েছে তা পরে জানানো হবে।

গতকাল সোমবার সকালে গোদনাইলের শান্তিবাগের মোঃ ইব্রাহিম খলিলের টিনশেড বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে ৮ টি কক্ষ রয়েছে। বাম দিকে রয়েছে ৫ টি এবং ডান দিকে রয়েছে ৩ টি কক্ষ। বাম পাশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কক্ষে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দ্বিতীয় ঘরটিতে বসবাস করছিলেন স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে মোঃ সোহাগ এবং তৃতীয় কক্ষে মোঃ হান্নান তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন। সোহাগের কক্ষের বিপরীত দিকের কক্ষের ভাড়াটিয়া মোসা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, রাতে বাড়ির সবাই খাওয়া ধাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু রাত আড়াইটার দিকে দুইটি কক্ষ থেকে ডাকচিৎকার শুনে ঘর থেকে বাড়ির অন্যান্যরা বের হয়ে দেখি হান্নানও তার পরিবার শরীরে আগুণ নিয়ে বাঁচাও বলে ডাক চিৎকার দিতে দিতে বের হয়েছেন তখন দেখি তার ঘরের মধ্যে এবং সোহাগের ঘরের মধ্যে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। বাড়ির সবাই সোহাগের ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাদের বের করেন এবং বালতির সাহায্যে পানি দিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করি। ওই বাড়ির আরেক ভাড়াটিয়া মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ঘুমিয়ে ছিলাম আগুণ আগুণ ডাক চিৎকার শুনে জেগে দেখি শরীরে আগুন নিয়ে হান্নান ও তার পরিবার ঘর থেকে বের হয়েছে তখনও ঘরের মধ্যে আগুন দাউ দাউ করছিল। হান্নাননের পাশের সোহাগের কক্ষেও আগুন এবং ডাক চিৎকারের শব্দ পাই তখন আমরা সোহাগের ঘরের দরজা ও বেড়া ভেঙ্গে তাদের অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করি এবং যে যার মতো করে ডেক্সি পাতিল ও বালতির সাহায্যে পানি ছিটিয়ে আগুন নিভাতে থাকি। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ বাবুল বলেন, আমরা ডাকচিৎকার শুনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি দুটি কক্ষে আগুন জ্বলছে এবং অগ্নিদগ্ধদের উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠাই।অনেক চেষ্টার পরে আগুন নিভাতে সক্ষম হন। হান্নান এর স্ত্রীর বোন আফসানা বলেন, সকলের অবস্থা আশংকাজনক। গতকাল সোমবার দুপুরে তিতাসগ্যাস এন্ড ট্রান্সমিশন ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ মামুনার রশীদ এবং ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোস্তাক মাসুদ মোহাম্মাদ ইমরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময়ে তারা ওই বাড়ির গ্যাসের লাইন ডিভাই দিয়ে পরীক্ষা করে সোহাগের ও হান্নানের ঘরের মেঝে( ঢালাইকৃত ফ্লোরের নিচে) গ্যাসের লিকেজ দেখতে পান। উপমহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মামুনার রশীদ বলেন, এই বাড়িতে অবৈধ গ্যাসের রাইজার রয়েছে। ফ্লোরের মধ্যে দিয়ে জিআই পাইপ দিয়ে ঘরের ফ্লোরের নিচে দিয়ে গ্যাস লাইনটি টানা হয়েছে এবং সেখানে চেকিং করে গ্যাসের লিকেজ রয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন গ্যাসের লিকেজ থেকেই এ বিস্ফোরণের  ঘটনা ঘটেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

সর্বশেষ সংবাদ

.