সারাদেশে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে রবিবার রাতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
রাত ১০টায় শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনার থেকে মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে এসে মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তির দাবি জানান। তারা বলেন, দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে অপরাধীরা বিচার থেকে রেহাই পেয়ে যায়। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।
এসময় নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাওঁলী বলেন, সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা আজ দেশের ক্রান্তিলগ্নে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি। নারীর যে সামান্য মৌলিক অধিকার ও শরীরের নিরাপত্তা দিতে এই রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। আমরা দেখেছি আমলের পর আমল পরিবর্তন হয় কিন্তু নারীর নিরাপত্তার কোন পরিবর্তন হয় না। নারী সর্বদা একটা ডি-হিউম্যানআইজ পশুর মত জীবন যাপন করে, যাদের টেনে হিচড়ে রাস্তায় নামিয়ে ধর্ষণ করা যায়,ছুরি চালানো যায়, মেরে ফেলা যায়। দেশের একের পর এক ধর্ষণ ঘটেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, নির্লজ্জের মত ইন্টারিম সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন অবনতি ঘটেনি। এই ঢাকা আরিচা সড়ক থেকে যখন মার্চ টু ঢাকা হয়েছিল তখন আমাদের ভাই বোনেরা শহীদ হয়েছে। আপনারা জানেন কখন আমরা আন্দোলন করেছিলাম, যখন কোন দল স্বৈরাচার হয়ে ওঠে,যখন কোন দল তাদের ভুল শিকার করতে চায় না,সে ঘটনার নতুন করে পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না। আজ আমাদের লজ্জা লাগছে ঢাকা অরিচা মহাসড়ক আবার অবরোধ করছি আমাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্যে। ৪ চার বছরের শিশু তার কি দোষ ছিল যে তার ধর্ষিত হতে হলো। আপনারা জানেন এই দেশের একটি নামমাত্র আইন আছে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি দন্ড তবে একবারের জন্যেও এই রাষ্ট্র নজির স্থাপন করতে পারেনি একজন ধর্ষকের মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে। আমরা আমাদের ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ থেকে পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই দর্শকের ফাঁসি দিয়ে নজির এই বাংলাদেশে তৈরি করতে হবে।
জার্নালিজম বিভাগের ৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ বলেন, এই ভূখিন্ডে ধর্ষকদের জন্য এমন সিস্টেম তৈরী করতে হবে যে সিস্টেমে চিরস্থায়ীভাবে এই ধর্ষণ বন্ধ হবে। এখন ধর্ষণের হার বেশি কেন জানেন? কারণ আমি বা অন্য কেও ধর্ষণ হলে আমার উপর আঙুল তুলবে ধর্ষকের কিচ্ছু হবে না। এইজন্য যারা ধর্ষিত হয় তারা পরিসংখ্যানেও থাকে না। আমরা যারা প্রিভিলেজ যারা তারাই তো রাস্তার ধারে, ঘরে বাইরে কত ধরণের যৌন হয়রানির শিকার হই।
সুতরাং রাস্তাঘাটে সুবিধাবঞ্চিত হাজার হাজার নারী আছে তাদের কি অবস্থা, তাদের কি হবে? আজকে যদি আসিয়ার খবর ভাইরাল না হতো আসিয়ার কি চিকিৎসা হতো? আসিয়ার ধর্ষকের বিচারের দাবিতে আমরা এখানে থাকতাম না। হাজার হাজার আসিয়া আমার আপনার আশে পাশেই আছে। এমন সিস্টেম এই প্রশাসনের তৈরী করে যেতে হবে যেন কোনো নারী,শিশু কেও ধর্ষণের শিকার না হয়। ধর্ষকরা কি স্বাভাবিক মানুষ? এরা মানষিক বিকারগস্ত এদের নৈতিকতা শিখিয়ে কিছু হয় না এদের দরকার ফাসির দড়িতে ঝোলানো।
অবরোধের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং দুই পাশে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির প্রতি সরকারের সুস্পষ্ট আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।